ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি পিন্টু

বিশেষ সংবাদদাতা ॥ পাবনার ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি জাকারিয়া পিন্টুকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ১৯ মামলা রয়েছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুরে

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, শনিবার (২৫ জুন) রাতে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৯৪ সালে পাবনা-ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে হামলা ও গুলিবর্ষণ করে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি তিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরদীতে ট্রেনে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
পিন্টু ২০০৯ সালে ঈশ্বরদীতে আজম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাভোগ করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে অস্ত্রসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হন এবং তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে কুষ্টিয়া ভেড়ামারা থানায় একটি মামলা হয়। এই মামলায় তিন মাস কারাভোগ করলেও পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি নিয়ে ফেরারি হন। মামলায় আদালত তাকে ১৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন। এছাড়াও ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে আধিপত্য বিস্তার, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা হয়। এ পর্যন্ত তার নামে ১টি মৃত্যুদন্ড ও ১টি ১৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের সাজা পরোয়ানা ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে ৬টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ঘোষণার পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। রায় ঘোষণার পরের দিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে দেশত্যাগ করে ভারতে আত্মগোপন করেন। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে দেশের মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকেন। সর্বশেষ কক্সবাজারের টেকনাফে তার বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে থাকেন।
র‌্যাব জানায়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রেনযোগে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাবার পথে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে পৌঁছালে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বগিকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই ঘটনায় পাবনার ঈশ্বরদীর জিআরপি থানায় বিষ্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১টি মামলা হয়। আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেওয়া হলে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ৩ এপ্রিল ১৯৯৭ সালে ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ৫ জন আসামি মৃত্যুবরণ করায় তাদের ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়। বাকি ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
পরবর্তীতে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই গ্রেপ্তারকৃত জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদন্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়। পিন্টুর নেতৃত্বে ঈশ্বরদীতে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ বিভিন্ন অরাজকতা চলতো। প্রথমে ১৯৮৮ সালে ও পরবর্তীতে বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ততায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। ওসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ত্যাগ করে ২০০৪ সাল থেকে ঢাকার মিরপুরে বসবাস শুরু করেন। তার পরিবার ঢাকায় থাকলেও সে নিয়মিত ঈশ্বরদীতে যাতায়াত করতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *