বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন এবং বাঙালি জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানে বাঙালি জাতির সংগ্রাম ও গৌরবের ইতিহাস। এ রাজনৈতিক দলটি এ দেশের সুদীর্ঘ রাজনীতি এবং বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দলটির নেতৃত্বেই এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। রোজগার্ডেনে জন্মগ্রহণের পর থেকে নানা লড়াই, সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাইপেরিয়ে দলটি এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আজবৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এ উপলক্ষে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ তিনদিন ব্যাপী নানা উৎসব কর্মসুচী গ্রহন করেছেন।
অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও তরুণ মুসলিম লীগ নেতাদেরউদ্যোগে ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন পুরনো ঢাকার কেএম দাস লেনের বশির সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাসভবনে একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ” প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির একচ্ছত্র নেতা। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও জাতির পিতা।
’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোষহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শুন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এর পর দলের মধ্যে ভাঙনও দেখা দেয়। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। চার দশক ধরে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে দলটি।
আবার ৭৩ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ বছর, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তৃতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হন।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে সম্পূর্ণ দেশের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরীসহ বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে “উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ”। আজ তা বিশ^ স্বীকৃত।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিন দিনের ব্যাপক কর্মসুচী গ্রহন করেছে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ। ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩ তম প্রতষ্ঠিা বার্ষিকী উপলক্ষে সকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্দুর প্রতিকৃেিত পুস্পার্ঘ অর্পন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সাড়ে ১১ টায় র্যালী, দুপুওে খাদ্য বিতরণ, বাদ যোহর দোয়া মাহফিল। ২৩ থেকে ২৫ জুন স্বাধীনতা চত্ত্বরে বিকেল ৫ টা হতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যা হতে আতোশবাজি অনুষ্ঠিত হবে। শহরের প্রধান সড়ক সমূহ আলোকসজ্জা, ব্যানার ফেস্টুন,জাতীয় ও দলীয় পতাকা দ্বারা সু সজ্জিত করণ করা হবে।