ডেস্ক নিউজ ॥ বাংলাদেশসহ ২৫ দেশের প্রকৌশলী, কর্মীর মেধা-শ্রমে নির্মিত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এ সেতুতে প্রকল্পের জনবল ছিল মাত্র ৯৫ জন। কিন্তু তাদের সঙ্গে ছিল দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ দল; ১২ সদস্যের প্যানেল অব এক্সপার্ট। সরকারের মন্ত্রী-আমলাসহ তাদের দুই যুগের প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে পদ্মা সেতু। নির্মাণের আট বছরে প্রকল্প ঠিকাদারের কর্মীসহ চার হাজারের বেশি মানুষ যুক্ত ছিলেন খর¯্রােতা পদ্মায় স্বপ্নের বাস্তবায়নে। সেতু বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পদ্মা সেতুতে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, কলম্বিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি, হংকং, ভারত, ইতালি, আয়ারল্যান্ড, জাপান, মালয়েশিয়া, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা কাজ করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ছিলেন চীনের নাগরিক, তাঁরা নির্মাণে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় সেই সময়কার প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দেয় সরকার। ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর এ পদে নিয়োগ পান শফিকুল ইসলাম। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) সাবেক এই অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে রেখে দেয়। আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। সে পর্যন্ত থাকছেন শফিকুল ইসলাম। দেশে কোনো প্রকল্পে তিনিই প্রথম প্রায় এক যুগ ধরে পরিচালকের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন।
বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর ২০১২ সালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় সেতু বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ পান বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্বে থাকা খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। পরের আট বছর তিনি ছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার (সেতু কর্তৃপক্ষ) নির্বাহী পরিচালক। এরপর বেলায়েত হোসেন, আবু বকর সিদ্দীকের পর বর্তমানে সেতু বিভাগের সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন মনজুর হোসেন। প্যানেল অব এক্সপার্টের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুর পর এ পদে এসেছেন আরেক বরেণ্য প্রকৌশলী অধ্যাপক শামীম জেড বসুনিয়া। দায়িত্ব পালনকালে মারা গেছেন অধ্যাপক এএমএম শফিউল্লাহ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৩২টি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা। প্রকল্প শেষে তাদের একটি বড় অংশ অবসরে যাবেন। বাকিরা নিজ নিজ সংস্থায় ফিরে যাবেন। প্রকল্পে ৬৩ জন অস্থায়ী জনবল রয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ প্রকল্পে ১৪ বছর ধরে চাকরি করেছেন। সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পরিচালক, হিসাবরক্ষক, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, গাড়িচালক, অফিস সহায়কসহ এসব পদে কর্মরতদের চাকরি স্থায়ী নয়। সরকারের নতুন নিয়মে প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্তদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর বা স্থায়ী করার সুযোগ নেই। সরকার তাঁদের জন্য বিশেষ বিবেচনা না করলে আগামী বছরের ৩০ জুন চাকরি হারাবেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মীরা।