‘এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা হতাশাজনক। বুধবার প্রকাশিত এ সূচকে পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর একটি হিসাবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। ইয়েল ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সহায়তায়।
গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, পরিবেশ রক্ষা সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭। প্রতিবেশী দেশ ভারত এ তালিকায় রয়েছে সবার নিচে আর শীর্ষে রয়েছে ডেনমার্ক। উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রতি দুই বছর পর পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন দেশের অবস্থান তুলে ধরে বৈশ্বিক এ সূচক প্রকাশ করা হয়।
এর আগে ২০২০ ও ২০১৮ সালের তালিকায় ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৯তম। মোট ১০টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ইপিআই সূচক তৈরি করা হয়। এগুলো হলো-বায়ুর মান, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন, ক্ষতিকর ভারী ধাতু, জলবায়ু ও জ্বালানি, বায়ুদূষণ, পানিসম্পদ ও কৃষি। এই ১০টি বিষয়ের প্রতিটিতে প্রাপ্ত নম্বর গড় করে বিভিন্ন দেশের অবস্থানের ক্রমতালিকা বা ইপিআই র্যাঙ্কিং তৈরি করা হয়। এবারের তালিকায় বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ২৩ দশমিক ১০।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তালিকায় বাংলাদেশের মতো খারাপ অবস্থানে রয়েছে ভারত (১৮০তম), পাকিস্তান (১৭৬তম) ও নেপাল (১৬২তম)। শ্রীলংকার অবস্থা ১৩২তম, মালদ্বীপ ১১৩ ও ভুটান ৮৫তম। সূচকে শীর্ষে থাকা ডেনমার্কের স্কোর ৭৭ দশমিক ৯০।
এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান মেনে নেওয়া কষ্টকর। এ সূচক বাংলাদেশের পরিবেশ উন্নত করতে আমাদের তাগিদ দিচ্ছে। বাংলাদেশের পরিবেশের কেন এই দুরবস্থা? পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ রোধে আইন ও প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই; কিন্তু আইনের প্রয়োগে রয়েছে বড় দুর্বলতা। আমরা পরিবেশ রক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ চাই।
মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বায়ুর মান এখন সবচেয়ে বড় পরিবেশগত হুমকি হয়ে উঠেছে। অথচ বায়ুদূষণে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নাজুক। শব্দদূষণেও বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। দেশের পরিবেশ উন্নত করতে হলে এ দুই দূষণ থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। দ্বিতীয় কথা, দেশে এখন উন্নয়ন প্রক্রিয়া জোরদার হয়েছে। উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিবেশের একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে।
উন্নয়ন প্রক্রিয়া যাতে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাস্তুতন্ত্রের ওপর যাতে এর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, খেয়াল রাখতে হবে সেদিকেও।